রবিবার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

আবারও বেসামাল মুরগি ও ডিমের বাজার

রিপু / ৭২৫ বার
আপডেট : রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২২
আবারও বেসামাল মুরগি ও ডিমের বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক, নরসিংদী জার্নাল|| আবারও বেসামাল মুরগি ও ডিমের বাজার|

মাত্র চার দিনের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে দশ থেকে পনেরো টাকা। এই সময়ে ডিম কিনতেও বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে ভোক্তাদের। খামারিরা বলছেন, প্রান্তিক পর্যায়ে মুরগি ও ডিমের দাম যা বেড়েছে, তার চেয়েও অনেক বেশি বেড়েছে বাজারে। এ জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করছেন তারা।

গত আগস্ট মাসে আলোচনায় ছিল ডিম ও ব্রয়লার মুরগি। বাজারে সরকারি সংস্থার বিশেষ অভিযান, অনুসন্ধানে উঠে আসে সিন্ডিকেটের তথ্য। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ওই সময় একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে ডিম ও মুরগির দাম বাড়িয়ে মাত্র ১৫ দিনে ৫২০ কোটি টাকা লুটে নেয়। শেষমেশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নানা পদক্ষেপ ও ডিম আমদানির হুশিয়ারিতে রাতারাতি দাম কমে যায়। কিন্তু সে স্বস্তি ছিল ক্ষণস্থায়ী। নজর সরতেই আবারও দাম হু হু করে বেড়েছে।

রাজধানীর মালিবাগ বাজারের খুচরা বিক্রেতা ফারুক আহমেদ ও কদমতলী সাদ্দাম মার্কেটের মো. শাহাবুদ্দিন জানান, মাত্র চার দিন আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে তা ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় ঠেকেছে। আড়তে দাম বাড়ায় খুচরাতেও দাম বাড়াতে হয়েছে তাদের।
কাপ্তানবাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. হাফিজ বলেন, বৃষ্টির কারণে বর্তমানে মুরগির সংগ্রহ কম। তা ছাড়া উৎপাদন খরচ অত্যধিক বাড়ায় খামারেও মুরগির দাম বেড়েছে। তাই বর্তমানে মুরগির দাম বাড়তি।

প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্র্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার আমাদের সময়কে বলেন, পোল্ট্রি খাবার ও বাচ্চার দাম বাড়তি থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলায় খামার পর্যায়ে ব্রয়লারের দাম বেড়েছে। তবে খুচরায় অতিরিক্ত বেড়েছে। খামারে এখন ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা পর্যন্ত। যা তিন থেকে চার হাত বদল হয়ে খুচরায় এ মুরগি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। বেশি হলে ১৭০ টাকা। কিন্তু বাজারে এখন ব্রয়লারের কেজি ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা। এটা অস্বাভাবিক।

ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার ওরগানিক এগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মিরাজুল হাসান ভ‚ঁইয়া আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের এখনো ব্যবসায়ী সমিতির নির্ধারিত দামেই ডিম-মুরগি বিক্রি করতে হয়। শুক্রবার আমাদের এ অঞ্চলে খামারগুলোয় ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। অথচ খুচরায় ১৮০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে খুচরা পর্যায়ে ডিমের দাম ডজনপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে ১৪৫ টাকা হয়েছে। পাড়া-মহল্লার দোকানে ১৫০ টাকা ডজনও বিক্রি হচ্ছে। মালিবাগ বাজারের ডিম ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, আড়তে এখন ১০০ পিস ডিম কেনাই পড়ছে ১ হাজার ১২০ টাকা। এ ডিমের ডজন ১৪৫ টাকার নিচে বিক্রি করলে পোষাবে না।

খামারিদের হিসাব বলছে, বর্তমানে খামার পর্যায়ে প্রতি পিস ডিমের উৎপাদন খরচ কম-বেশি ১০ টাকা। পাইকারদের কাছ থেকে দাম পাচ্ছেন ১০ টাকা ১৫ পয়সা থেকে ২০ পয়সা পর্যন্ত। অথচ খুচরায় প্রতি পিস ফার্মের ডিমের দাম পড়ছে ১২ টাকারও বেশি।

নবাবগঞ্জের খামারি মিরাজুল হাসান বলেন, গত শুক্রবার প্রতিপিস ডিমের দাম পেয়েছি ১০ টাকা ১৫ পয়সা করে। এটাই ব্যবসায়ী সমিতির নির্ধারিত দর। পোল্ট্রি ফিডের অত্যধিক দাম ও খামারের খরচ বাড়ায় আমাদের আয় ও ব্যয় দিনশেষে বলতে গেলে সমানে সমান। অথচ যারা মিডলম্যান তারা ঠিকই অতিরিক্ত লাভ করছেন। এটা হতাশাজনক।

বাংলাদেশ পোল্ট্র্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদারও জানান, খামারিরা ডিম বিক্রিতে পাইকারদের কাছ থেকে ১০ টাকা ২০ পয়সার বেশি পাচ্ছেন না। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে সাড়ে ১২ টাকা। যেখানে হাতবদলের পরেও সাড়ে ১১ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা।

সুমন হাওলাদার বলেন, বড় কোম্পানিগুলো এবং ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলো এখনো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা বাজার বুঝে সকালে এক দাম, রাতে আরেক দাম বেঁধে দিচ্ছেন। বড় কোম্পানিগুলোর কাছে মজুদ বেশি থাকলে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আমরা চাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও খামারিদের সমন্বয়ে পোল্ট্রি বোর্ড গঠন করে সরকার মুরগি ও ডিমের দাম বেঁধে দিক। খামারিরা বেশি লাভ চায় না। লোভী মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে হবে। নইলে ছোট খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।

এগ প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকীও বলেন, বাজারে সরকারের অভিযানে দাম কমেছিল। এখন আবার আগের মতো চলছে। ঘুরেফিরে ব্যবসায়ী সমিতিগুলো ও মিডলম্যানদের হাতে খামারিরা জিম্মি। খামারে কম দামে কিনে বাজারে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম। বাজারে আবারও অভিযান দরকার।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ডিমে বারবার ব্যবসায়ী সমিতির নাম উঠে আসছে। ব্যবসায়ী সমিতিগুলো ব্যবসায়ীদের ভালো-মন্দ দেখার জন্য গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের অতিরিক্ত মুনাফা করার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমনটা হলে প্রয়োজনে ব্যবসায়ী সমিতিগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। পাশাপাশি কারসাজিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ । রিপু /নরসিংদী জার্নাল

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ